ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজের সেঞ্চুরিতে আফগানিস্তানের কাছে টানা দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সোমবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে আফগানদের কাছে ৫ উইকেটে হেরেছে টাইগাররা।

সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তান ৯২ রানে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ৬৮ রানে জয় পেয়েছিলো। ফলে ২-১ ব্যবধানে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতলো আফগানরা। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ঘরের মাঠে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে আফগানিস্তানের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরেছিলো বাংলাদেশ।

চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন দুই আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ এবং সেদিকুল্লাহ আতাল। দুজনের ব্যাট থেকে আসে ৪১ রান। অষ্টম ওভারে চতুর্থ বলে সেদিকুল্লাহকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন অভিষিক্ত পেসার নাহিদ রানা।

কিন্তু অপর প্রান্ত আগলে রেখে রান তুলতে থাকেন আরেক ওপেনার গুরবাজ। রহমত শাহ (৮) এবং হাশমতুল্লাহ শহীদি ৬ রানে আউট হলেও ৬০ বলে ফিফটি তুলে নেন গুরবাজ। আজমতুল্লাহ ওমারজাইকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের পথে টানতে থাকেন তিনি।

১১৭ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নেন গুরবাজ। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন আজমতুল্লাহ। তবে সেঞ্চুরি তোলার পর পিচে টিকতে পারেননি গুরবাজ। ১০১ রান করে মিরাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে কাটা পড়েন তিনি। এরপর গুলবাদিন নাইব ১ রানে আউট হলেও ৫৯ বলে ফিফটি তুলে নেন আজমতুল্লাহ।

সপ্তম উইকেটে নবীকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ে পথে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন আজমতুল্লাহ। শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদ নবীর ৩৪ রান এবং আজমতুল্লাহ ৭৭ বলের অপরাজিত ৭০ রানে ইনিংসে ভর করে ১০ বল ও ৫ উইকেট হাতে থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় আফগানিস্তান।

বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট শিকার করেন মোস্তাফিজুর রহমান এবং নাহিদ রানা। এ ছাড়াও এক উইকেট মেহেদী হাসান মিরাজ।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশকে উদ্বোধনী জুটিতে ৫৩ রান এনে দেন সৌম্য সরকার ও তানজিদ হাসান তামিম। অবশ্য পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই ফিরে যান দুজন। ২৩ বলে ২৪ রান করে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বল টেনে এনে বোল্ড হয়ে যান সৌম্য।

পরের ওভারে তানজিদ হাসান কাভারে ক্যাচ দেন হাশমাতুল্লাহ শহীদির হাতে। ৩ চারে ২৯ বলে তিনি ফেরেন ১৯ রানে। ৫ রান ও ১২ বলের ব্যবধানে বাংলাদেশ হারায় তিন উইকেট। যার শেষটি ছিলেন জাকির হাসান। তিনি অবশ্য হয়েছেন রান আউট।

ওমরজাইয়ের ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বল পয়েন্টে পাঠান মিরাজ। তিনি সিঙ্গেল নিতে ঝুঁকতেই দৌড়ে পিচের অর্ধেক চলে আসেন জাকির। মিরাজ না করার পর তিনি ফেরার আগেই সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভাঙেন খারোতে।

এরপর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের সঙ্গী হন তাওহীদ হৃদয়। কিন্তু তিনি ফেরেন রশিদ খানের বলে স্লিপে দাঁড়ানো গুলবাদিন নাইবের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ১৭ বল খেলে ৭ রান করে ফেরেন হৃদয়। অল্প সময়ের ব্যবধানে চার উইকেট হারিয়ে বেশ বিপদেই পড়ে যায় দল।

ওখান থেকেই অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন মিরাজ। যদিও তাদের পথচলা ছিল কিছুটা ধীর। এক পর্যায়ে একটা বাউন্ডারির জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় ৫০ বলের বেশি।

তবে শেষদিকে এসে কিছুটা হাত খোলার চেষ্টা করেন তারা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ নিজের ক্যারিয়ারের ২৯তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ৬৩ বলে। ১৪ ইনিংস পর এই মাইলফলকে পৌঁছান তিনি।

আরেকদিকে মেহেদী হাসান মিরাজও তার নেতৃত্বের প্রথম ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি পান। বাংলাদেশের পঞ্চম অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকে ও তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে হাফ সেঞ্চুরি পান শততম ম্যাচে। ৫০ রান করতে তার লাগে ১০৬ বল।

রিয়াদ-মিরাজের লম্বা জুটি ভাঙে ৪৬তম ওভারে গিয়ে। মিড অফে ওমরজাইয়ের বলে নাইবের হাতে ক্যাচ দেন মিরাজ। ১১৯ বলের ইনিংসে ৪টি চার হাঁকিয়ে ৬৬ রান করেন তিনি। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তার জুটি ছিল ১৮৮ বলে ১৪৫ রানের।

তার বিদায়ের পর বাকি ভার আসে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাঁধে। শেষ ওভারে চার রান করতে পারলেই সেঞ্চুরি পূর্ণ হতো তার। কিন্তু তিনবার স্ট্রাইক পেয়ে দুই রানের বেশি করতে পারেননি রিয়াদ। শেষ বলে হয়ে যান রান আউটও। আফগানিস্তানের পক্ষে চার উইকেট নেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই।